বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। তৈরি পোশাক, কৃষি ও ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা—সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতি দৃশ্যমান। তবে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড কিংবা মহামারির মতো দুর্যোগ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রস্তুতি ছাড়া এই অগ্রযাত্রা টেকসই হবে না।
দুর্যোগ কেবল মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং অর্থনীতির জন্যও বড় আঘাত। উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ে, রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সাপ্লাই চেইনে ভাঙন ধরে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের প্রমাণ করতে হবে—আমরা সংকটেও ব্যবসা সচল রাখতে পারি।
কিন্তু বাস্তবতায় বেশিরভাগ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এখনো কোনো Business Continuity Plan (BCP) নেই। অগ্নি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ সীমিত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা (SME) সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের জন্য উদ্যোগ কম। কর্মীদের সচেতনতা ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের ঘাটতিও প্রকট।
এ প্রেক্ষাপটে FBCCI গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। Bangladesh Preparedness Partnership (BPP)-এর আওতায় FBCCI ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা চেম্বারে Safety Cell প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব সেলের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে Private Sector Emergency Response Team (PERT) গড়ে তোলা হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং SME খাতে BCP প্রচলনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে FBCCI জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (NPDM) বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক Sendai Framework-এর সঙ্গেও সামঞ্জস্য রাখছে।
তবে কাজ এখানেই শেষ নয়।
- আরও বেশি জেলায় কার্যকর Safety Cell গঠন করা দরকার।
- শ্রমিক ও ম্যানেজারদের প্রশিক্ষণ ও মক ড্রিল বাড়াতে হবে।
- প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে হালনাগাদ BCP চালু করা জরুরি।
- খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকেও প্রস্তুতির অংশ করতে হবে।
দুর্যোগ প্রস্তুতিকে খরচ নয়, বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত। আজকের প্রস্তুতি ভবিষ্যতের ক্ষতি রোধ করবে। FBCCI ইতোমধ্যেই পথ দেখিয়েছে; এখন প্রয়োজন প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে এই উদ্যোগের অংশ করে এটিকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশে পরিণত করা।
টেকসই অর্থনীতি দুর্বল ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে না। বাংলাদেশের জন্য সময় এখনই—এবং ব্যবসা খাতকে প্রস্তুত করতেই হবে।
লেখকঃ
সাখাওয়াত স্বপন
ক্যাপাসিটি বিল্ডিং স্পেশালিস্ট, এফবিসিসিআই সেইফটি কাউন্সিল
এবং
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান
সেইফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন